top of page
To go to other chapters for mobile and app users, tap on   the above three lines.
লেখক—  মহর্ষি মহামানস
বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ :
এই গ্রন্থের সমস্ত বিষয়-বস্তু লেখক কর্তৃক কপিরাইট করা আছে। তাই, লেখকের লিখিত অনুমতি বিনা, এই গ্রন্থের কোনো লেখা বা কোনকিছু কপি করা এবং তা’ কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্নতঃ আইন বিরুদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।  
You can translate and read this page (https://mahadharma.wixsite.com/book) in any language. Copy the web link from the browser, go to this website and paste it in the specified place and select your language.
http://itools.com/tool/google-translate-web-page-translator
Cover - 2020 copy.jpg
About
No part of this book.....
মহাধর্ম
মানবধর্মই মহাধর্ম
মহর্ষি মহামানস
মহাধর্ম মিশন
নিবেদিত
ভাষাপথ
output-onlinepngtools.png
Download App from this link:
http://www.appcreator24.com/app1343725
MahaDharma : ManabDharma-i MahaDharma
By Maharshi MahaManas
A philosophical and educational book of profound wisdom 
© All rights reserved by Author  
First edition: 
প্রকাশক :  দয়াময়ী মন্ডল
সম্পাদক  : শ্রীমন্য
প্রচ্ছদ  : 
অক্ষর বিন্যাস :
মুদ্রক  :
ISBN : 
মূল্য  : 260 টাকা মাত্র
 
এই গ্রন্থটি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে, প্রকাশ করতে আগ্রহী প্রকাশকগণ যোগাযোগ করুন। 
সূচীপত্র
বিষয়                                   পৃষ্ঠা
প্রকাশকের নিবেদন
সম্পাদকের কথা
উপক্রমণিকা
প্রথম অধ্যায় :
'ধর্ম' কী ও কেন
মহাধর্ম : সারকথা
মানবধর্ম আসলে কী—
মানুষ হওয়া বলতে কী বোঝায়
ধর্ম কথা
ধর্ম প্রসঙ্গে নানা কথা
সমস্যা— তার মূল কারণ ও সমাধান
মহাধর্ম ঃ আরো দু-চার কথা
মহাধর্ম গ্রহণ সম্পর্কে
মহাধর্ম যাঁদের জন্য
পূজা-আরাধনা-প্রার্থনা প্রসঙ্গে
দীক্ষা প্রসঙ্গে
সময়োপযোগী সতর্কীকরণ
দ্বিতীয় অধ্যায় :
আধ্যাত্মিকতা 
মন-আমি
নিজের মনকে জানো
প্রসঙ্গ : চেতনা 
মন সম্পর্কে আরেকটি নিবন্ধ
মন-এর কথা
আত্মা—মন—পুণর্জন্ম
প্রসঙ্গ : শান্তি
সুখ ও শান্তি
বিশ্বাস কী ও কেন
বিশ্বাস ও জ্ঞান
বিশ্বাস ও আরোগ্য 
সন্দেহ ও সতর্কতা
বিশ্বাসের চশমাটাকে খুলে রেখে দেখো
বিশ্বাস ও দর্শন
মুক্তমনার স্বরূপ 
বিজ্ঞানকে কী নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করা যায়?
স্বপ্ন কথা
প্রসঙ্গঃ পাগল ও পাগলামী
ট্রান্স সম্পর্কে কিছু কথা
ঈশ্বর দর্শন
তৃতীয় অধ্যায়
কর্ম ও কর্মফল (১ম, ২য়, ৩য় পর্ব)
অলৌকিকতা প্রসঙ্গে 
প্রসঙ্গ : মায়া 
প্রসঙ্গ : সত্য 
বৈপরীত্যময় এই জগৎ
প্রসঙ্গঃ মানবসেবা ও মানবধর্ম
প্রসঙ্গ: পাপ
যোগ রহস্য
এই জগৎ ও আমরা
তুমি আর জাগতিক ঘটনাপ্রবাহ
প্রসঙ্গ : স্বাধীনতা
প্রসঙ্গ স্বার্থ
আগ্রহ— ভালবাসার মূলে থাকে স্বার্থ
প্রসঙ্গ ভালোবাসা 
নিষ্কামকর্ম যেন সোনার পাথরবাটি !
মানবতা 
প্রসঙ্গ: ভয়
প্রসঙ্গ : মুক্তি 
প্রসঙ্গ : ভক্তি
প্রার্থনা প্রসঙ্গে
বিজ্ঞান প্রসঙ্গে
জ্ঞানী কাকে বলা হবে
চতুর্থ অধ্যায়
মহাসৃষ্টিরহস্য উন্মোচন
বিশ্বাত্মা/ ঈশ্বর ও আমরা
ভাগ্য আসলে কী
ঈশ্বর / বিশ্বাত্মা প্রসঙ্গে মহর্ষি মহামানস
ঈশ্বর-মন (বিশ্বাত্মা) অস্তিত্ব প্রসঙ্গে
ঈশ্বর-অস্তিত্ব সম্পর্কে আরো একটি প্রবন্ধ
জীবাত্মা ---দিব‍্যাত্মা ​
সময় আসলে কী (১ম, ২য়, ৩য় পর্ব)
মহাবাদ ও বিবর্তনবাদ
জীব-সৃষ্টিরহস্য উন্মোচন
বিষয়                                   পৃষ্ঠা
পঞ্চম অধ্যায়
শিক্ষা প্রসঙ্গে কিছু কথা
শুভ পরিবর্তন আসছে
প্রসঙ্গ : আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রম 
জাগো— ওঠো, বিকাশলাভ করো 
শিক্ষা প্রসঙ্গে নানা কথা
আগ্রহ— ইন্টারেস্ট
মনোবিকাশের সহজ উপায় 
অসন্তোষ থেকে মুক্তি
পৃথিবীর কঠিন অসুখ~ গভীর সঙ্কট!
মহামনন : মহা আত্মবিকাশ যোগ শিক্ষাক্রম
মহাবাদ
মানুষ গড়ার কর্মশালা
একটি শিশুকে পৃথিবীতে নিয়ে আসা সম্পর্কে
মুক্তি চাও? নাকি মুক্ত হতে ভয় পাও? 
ভুল বোঝাবুঝি মানবসমাজের এক বড় সমস্যা
বুঝতে না পারার কারণ
কিছুতেই মনে পড়ছে না!
উত্তেজনা— ভুলে যাওয়ার অন্যতম কারণ
পড়াশোনা করা যেন লড়াই করা না হয়
ভালো ছাত্র-ছাত্রী হতে হলে
ভবিষ্যতের কথা ভেবে
ছাত্র-ছাত্রীদের মা-বাবার উদ্দেশে
গুরু—মেন্টর প্রসঙ্গে
সৃজনশীল হও
এইতো মানুষ
ষষ্ঠ অধ্যায়
সংক্ষেপে 'মহামনন' শিক্ষাক্রম 
সহজ উপায়ে মনোবিকাশ কিভাবে সম্ভব
আত্মবিকাশ যোগ 
মহামনন
সাফল্য লাভের উপায়
জীবনে সাফল্য লাভ প্রসঙ্গে
পজেটিভ পরিকল্পনা কি ভাবে করবে 
মনকে আবর্জনা মুক্ত রাখো
সুষুপ্তি যোগ  : তদবিষয়ক আলোচনা ও নির্দেশ
মন-আমি যোগ
সহজ প্রাণযোগ 
সংগীতের মাধ্যমে 'মহামনন' ধ্যান
মহামনন-যোগ~৫, ৬,
মহামনন' ধ্যান সাধনা
মহাধর্ম অনুশীলন
মহামনন ধ‍্যান-যোগ শিক্ষাক্রম
প্রসঙ্গ: ধ্যান 
ধ্যান শিক্ষার্থীদের প্রতি জ্ঞাতব‍্য
সপ্তম অধ্যায়
সবার আগে চাই সুস্থতা
অনেক অসফলতার মূলেই— অসুস্থতা
চিকিৎসা প্রসঙ্গে মহর্ষি মহামানস
প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সর্বাঙ্গীন চিকিৎসা  
এসিডিটি : এক ভয়ানক সমস্যা
বায়ুরোগ
প্রাচীন প্রদাহ
অটোইমিউন ডিজিজ সম্পর্কে
রোগ-ব‍্যাধি ও চিকিৎসা প্রসঙ্গে নানা কথা
প্রসঙ্গ ; উপবাস
রোগবিষ বা টক্সিন
হতাশা এবং তজ্জনিত মনোবিকার এক বড় সমস্যা
অষ্টম অধ্যায়
মহর্ষি মহামানস :  অতি সংক্ষিপ্ত পরিচয়
মহর্ষি মহামানসঃ সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য 
এক বিস্ময়কর নতুন জগৎ 
মানবধর্ম/ মহাধর্মের গান 
মনোবিকাশ-পদ্মের ডায়াগ্রাম
উপসংহার
প্রাপ্তিস্থান :

প্রকাশকের নিবেদন

একটি নতুন ধর্ম— প্রকৃত মানব-বিকাশের জন্য।

 

আজ আপনাদেরকে মানবধর্ম ভিত্তিক আত্মবিকাশ বা মনোবিকাশ মূলক তথা মানববিকাশ মূলক যুগান্তকারী একটি নতুন ধর্মের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে প্রয়াসী হয়েছি। যুগসন্ধিকালের এই তীব্র সংকটাবস্থায়, মনুষ্যকৃত অধিকাংশ জটিল সমস্যার মূল— অজ্ঞানতা-অন্ধত্বকে দূর করে, আমাদের আত্মবিকাশমুখি মৌলিক ধর্ম— মানবধর্মকে পুণঃপ্রতিষ্ঠিত করতে, সময়ের চাহিদামতোই, আত্মপ্রকাশ করেছে একটি নতুন ধর্ম। ধর্মটির নাম — মহাধর্ম। 

বিমূর্ত মানব ধর্মের মূর্ত রূপই হলো 'মহাধর্ম'

এই ধর্ম প্রচলিত ধর্মগুলির মতো অন্ধবিশ্বাস এবং ঈশ্বরারাধনা ভিত্তিক ধর্ম নয়। 'মহাধর্ম' হলো বিমূর্ত মানবধর্মের মূর্ত রূপ— প্রকৃত মানব বিকাশমূলক ধর্ম। অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে, সচেতনতার আলোকে জগতকে আলোকময় করে তুলতেই মানবধর্ম— মহাধর্ম-এর আবির্ভাব। ইন্টারনেট তথা সোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই ধর্মমত প্রায় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। আত্মবিকাশকামী যুক্তিবাদী মুক্তচিন্তক অনেক মানুষই ক্রমশ এই ধর্মের ভক্ত ও অনুসরণকারী হয়ে উঠেছেন। এই ধর্মের প্রবক্তা হলেন— মহর্ষি মহামানস।  

মানব ধর্ম— হলো মানুষের প্রকৃত ধর্ম— আদি ধর্ম। আত্ম-বিকাশের ধর্ম। আমরা সেই মানবধর্মকে ভুলে গিয়ে, নানারূপ ধর্ম ও অধর্ম নিয়ে অজ্ঞান-অন্ধের মতো মোহাচ্ছন্ন হয়ে মেতে আছি। চারিদিকে একটু সচেতন দৃষ্টিতে তাকালেই দেখা যাবে— দিনকে দিন ক্রমশ ভয়ানক পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা। আজকের এই ঘোর সঙ্কটকালে— এই সর্বনাশা করুণ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে, অবিলম্বে মানবধর্মকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত ক’রে, মানবধর্ম অনুশীলন করতে হবে আমাদের। প্রতিটি মানুষের প্রধান কর্তব্য হলো প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠা। পূর্ণ বিকশিত মানুষ হয়ে ওঠার জন্য অনুশীলণীয় ধর্মই হলো— 'মহাধর্ম'।

মানবধর্ম মানে শুধু সৎ ও সহৃদয়— সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠাই নয়, মানবধর্ম হলো পূর্ণ বিকশিত মানুষ হয়ে ওঠার জন্য অবশ্য পালনীয় ধর্ম। একজন বিকশিত মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সৎ ও সহৃদয়— সহানুভূতিশীল  হয়ে থাকেন। মানবধর্ম অনুশীলনের মধ্যদিয়েই প্রকৃত মানব-বিকাশ এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। মানবজীবনে এক শুভ-পরিবর্তন আসছে মানবধর্ম— মহাধর্ম-এর পথ ধরে।  

মহাধর্ম হলো— মানবধর্ম ভিত্তিক অন্ধ-বিশ্বাসমুক্ত মানব-বিকাশমূলক অধ্যাত্মিক-বিজ্ঞান অনুসারী যুগোপযোগী ধর্ম। মহাধর্ম হল— এ’কালের মহা বৈপ্লবিক উত্তাল তরঙ্গ— প্রকৃত মানব বিকাশের জন্য। এ’হলো অত্যুৎকৃষ্ট (সুস্থ—শান্তিপূর্ণ ও যথেষ্ট বিকশিত) জীবন লাভের শ্রেষ্ঠ পথ। মহাধর্ম গ্রহন করতে, এবং দিকে দিকে সংগঠন গড়ে তুলতে, মুক্তমনের সত্যপ্রেমী যুক্তিবাদী আত্ম-বিকাশকামী জ্ঞানপথের উদ্যোগী মানুষদের আহ্বান জানাই।

চতুর্দিকে মানবকেন্দ্রিক যত অশান্তি, যত সমস্যা ও সঙ্কট ক্রমশ ভয়ানক রূপ ধারণ করতে চলেছে, তার অধিকাংশেরই মূল কারণ হলো— জ্ঞান ও চেতনার স্বল্পতা এবং শরীর ও মনের অসুস্থতা। আর, এর একমাত্র সমাধান হলো— সার্বিকভাবে 'মহাধর্ম' অনুশীলন।
শরীর ও মনের সুস্থতাসহ মনোবিকাশ এবং সার্বিক উন্নতি লাভের জন্য ‘মহাধর্ম' গ্রহন করুন, এবং আত্ম-বিকাশ-যোগ অনুশীলন করুন। পূর্বের ধর্ম ত্যাগ না করেও মানবধর্ম— ‘মহাধর্ম গ্রহণ করা যাবে। এই ধর্ম প্রচলিত ধর্মের মতো নয়। মানুষকে সচেতন ও সুস্থ করে তোলাই এই ধর্মের মূল উদ্দেশ্য।
মানবধর্ম অনুশীলনের মধ্যদিয়েই প্রকৃত মানব-বিকাশ এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। মানবজীবনে এক শুভ পরিবর্তন আসছে— মহাধর্ম-এর পথ ধরে।

প্রতিদিন সারা পৃথিবী জুড়ে অত্যন্ত মর্মাহতকর মনুষ্যকৃত যে সমস্ত ঘটনা ঘটে চলেছে, এবং মানুষের যে বিকৃত—বিকারগ্রস্ত—উন্মাদপ্রায় রূপ আমরা অসহায়ের মতো প্রত্যক্ষ ক’রে চলেছি, ধর্ম—রাজনীতি—প্রশাসন প্রভৃতি প্রচলিত কোনো ব্যবস্থা/সিস্টেম-ই তার প্রতিকারে সক্ষম নয়। 

আজকের এই ঘোর সঙ্কটকালে— এই ঘোর দুর্দিনে, আগামী সর্বনাশা পরিণতি থেকে— একমাত্র আধ্যাত্মিক বিপ্লবই আমাদের রক্ষা করতে সক্ষম। তবে আশার কথা, প্রকৃত আধ্যাত্মিকতার এক প্রবল ঢেউ নেপথ্যে বর্ধিত হয়ে চলেছে। এবং তা' শীঘ্রই ধাবিত হয়ে আসছে। অবিলম্বে তাকে স্বাগত জানাতে হবে— আমাদের নিজেদের স্বার্থেই। 

যথার্থ আধ্যাত্মিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে—, যথেষ্ট চেতনার অভাব এবং স্বল্প-জ্ঞান বা অজ্ঞানতাই অধিকাংশ দুঃখ-কষ্ট এবং সমস্যার প্রধান কারণ। একমাত্র, প্রকৃত আধ্যাত্মিক বিজ্ঞানের শিক্ষাসহ প্রকৃত আধ্যাত্মিকতার ভিত্তিতে গঠিত যথার্থ ও সার্বিক আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রমের অনুশীলনের মধ্য দিয়েই এর সামাধান সম্ভব। ব্যক্তি এককের বিকাশের মধ্য দিয়েই দেশের এবং সমগ্র মানবজাতির বিকাশ সম্ভব। আর সেই উদ্দেশ্যেই— মহাধর্ম। 

 

মহর্ষি মহামানস-এর মহান মতবাদ— 'মহাবাদ'-ই এনেছে সেই প্রকৃত ও যুক্তিসম্মত অধ্যাত্মবাদের জোয়ার। আধুনিককালের মহাঋষি— সদগুরু মহা মানবপ্রেমিক— মহামানস-এর প্রকৃত জ্ঞান-দর্শন এবং তাঁর মহা আত্মবিকাশ পথের পথনির্দেশ-ই আমাদের প্রকৃত মুক্তির পথ। অজ্ঞানতা-অন্ধত্ব থেকে উদ্ভূত এই চরম সংকট থেকে নিশ্চিত উদ্ধারের একমাত্র উপায়। এখনও সময় আছে, আমরা যদি এখনও সেই পথ অবলম্বন ক’রে এগিয়ে যেতে পারি, তাহলেই শেষ রক্ষা হবে।

 

এখানে যাকিছু বলছি, সবই তাঁর কথা— তাঁর উপদেশ থেকে নেওয়া। শুধু তাই নয়, মহর্ষি মহামানসের 'মহাবাদ' গ্রন্থ থেকে কিছু নির্বাচিত অংশ নিয়ে এবং ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা তাঁর বিভিন্ন রচনাগুলি একত্রিত করেই এই গ্রন্থটি প্রস্তুত হয়েছে।

'মহাধর্ম'  আমাদেরকে পরমুখাপেক্ষী ভিখারি হতে শেখায় না। সজাগ-সচেতন স্বাবলম্বী হতে শেখায়। 'মহাধর্ম' আমাদেরকে অজ্ঞান-অন্ধের মতো বিশ্বাস করতে শেখায় না, বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জন করতে শেখায়। 

 

নিজেদের তথা মানবজাতির প্রকৃত উন্নয়নে, এই মহাকর্মযজ্ঞে শরিক হোন। মহাধর্ম-এর মনোবিকাশ মূলক শিক্ষার আলো চতুর্দিকে যত বেশি প্রসারিত হবে, মনের অন্ধকার— অজ্ঞান-অন্ধত্ব ততই দূর হয়ে যাবে। আমরা ততই শান্তি-সুস্থতা, আত্মবিকাশ লাভ করতে পারবো। আরও উন্নত, আরও ভালো জীবন লাভ করতে পারবো আমরা। এই মানববিকাশমূলক মহান উদ্যোগকে সফল করে তুলতে,সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করুণ এবং আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।  ধন্যবাদ।   

মানব ধর্মই মহাধর্ম
সম্পাদকের কথা

শুরুতেই, কবির একটা বাণী মনে পড়ে গেল। ‘জন্মিলে মরিতে হবে— অমর কে কোথা কবে’। শুধু উদ্ভিদ আর জীব জগতেই নয়, সমস্ত ক্ষেত্রেই, মায় মহাবিশ্ব পর্যন্ত, যার জন্ম হয়েছে— তার মৃত্যু হবে। যার শুরু আছে— তার শেষ আছে। সৃষ্টি হলেই একসময় তার ধ্বংস অনিবার্য।

ধর্মের ক্ষেত্রেও সেই এককথা। প্রচলিত সমস্ত ধর্মগুলি এক এক সময়— এক একজন বা কয়েকজনের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। আবার পূর্বনির্ধারিত ভাবেই যখন যার শেষ হবার— শেষ হয়ে যাবে।

আচ্ছা? —একবারও কি আপনাদের মনে হয়না, আপনারা যে— যে ধর্ম অনুসরণ করে চলেছেন, সেই সেই ধর্মের স্রষ্টা যে বা যাঁরা— তাঁদের ধর্ম কি ছিলো?! তাঁদের পিতা— প্রপিতার ধর্ম কি ছিলো? তাঁদের পূর্বাদিপূর্ব মানুষদের ধর্ম কি ছিলো?!

একবারও কি প্রশ্ন জাগেনা? শিকড়ের সন্ধানে একবারও কি চিন্তা-ভাবনার উদয় হয়না আপনাদের মনোজগতে?

হ্যাঁ, তখনো ধর্ম ছিলো। আমরা আমাদের জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে তা’ অনুসরণ করে এসেছি। তা’ হলো— আত্ম-বিকাশমূলক ধর্ম— মানব ধর্ম। মানুষ সৃষ্টির সাথেসাথেই ঈশ্বর (বিশ্বাত্মা) তথা জাগতিক ব্যবস্থাই এই ধর্ম সৃষ্টি করেছে। যতদিন মানবজাতি থাকবে— মানবধর্মও থাকবে ততদিন।

এই সাধারণ কথাটা আমাদের অবোধ মন কিছুতেই বুঝতে পারেনা, বুঝতে চায়না! আরে! ঈশ্বর সৃষ্ট ধর্ম —এত প্রকারের — এত ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির হবে কেন?! বিভিন্ন চেতন-স্তরের জন্য বিভিন্ন ধর্ম হলে, তাও একটা কথা ছিলো। ঈশ্বর সৃষ্ট ধর্ম তো সর্বত্র একই হবে! এক এক জায়গায় এক এক রকমের হবেনা। আর, তা’ হবে আত্ম-বিকাশ মূলক —মানব-উন্নয়ন মূলক ধর্ম।

একবারও কি কখনো প্রশ্ন জেগেছে মনে— যে ঈশ্বরকে নিয়ে আমরা এতো মাতামাতি করি, এতো যার উপাসনা করি— যার কাছে দিন-রাত প্রার্থনা করি—, সেই ঈশ্বরের ধর্ম কী?

ঈশ্বরের ধর্মও সেই আত্ম-বিকাশের ধর্ম— 'মহাধর্ম'। মানুষের ক্ষেত্রে তাকেই আমরা বলি, মানরধর্ম। মানব চেতন-স্তরে এই মানব ধর্মই— মহাধর্ম। আত্ম-বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়— বিভিন্ন স্তর আছে। প্রতিটি স্তরের ধর্মের মধ্যেও কিছু কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন, শৈশবের ধর্ম, কৈশোরের ধর্ম, যৌবনের ধর্ম প্রভৃতি। আত্ম-বিকাশ জীবন তথা মহাজীবনের মূল কথা হলেও, প্রতিটি পর্যায়ের মধ্যে মাত্রাগত ও আচরণগত পার্থক্য রয়েছে।

আমরা— কীট-চেতন-স্তর, পশু-চেতন-স্তর, আদিম-মানব-চেতন-স্তর প্রভৃতি বিভিন্ন স্তর পেরিয়ে এসে এখন মানব-চেতন-স্তরে উন্নীত হয়েছি। যে পর্যায়ের যে ধর্ম— যে কাজ, তা’ শেষ করতে না পারলে, আমরা ঊর্ধতন স্তরে পৌঁছাতে পারবো না। নিম্ন-চেতন-স্তরগুলোতে আছে— দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রনা —শোক-সমস্যা-হতাশা! যত উচ্চ-চেতন-স্তরে উন্নীত হব, ততই এই সমস্ত দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি ঘটবে আমাদের।

এইভাবে, ধাপে ধাপে আমরা দেব-চেতন—, মহাদেব-চেতন-স্তর,  ক্রমে ঈশ্বর-চেতন-স্তরে উপনীত হবো। বাঘের বাচ্চাতো বাঘই হবে! ঈশ্বরের সন্তান ধাপে ধাপে একসময় ঈশ্বর হয়ে উঠবে! আমাদের জীবনের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য এটাই। পূর্ণ বিকাশলাভ। এই লক্ষ্য কারো কারো কাছে স্পষ্ট, কারো কারো কাছে নয়। আগামী স্তরগুলিতে পৌঁছাতে হলে, আমাদেরকে পূর্ণ বিকশিত মানুষ হয়ে উঠতে হবে সবার আগে। তার জন্য করণীয় যা, —তা-ই হলো মানবধর্ম। এই মানবধর্মই— 'মহাধর্ম'।

হাজার হাজার বছর পূর্বে, যখন অধিকাংশ মানুষের চেতনা ছিলো খুবই কম, তখনকার দিনের অপেক্ষাকৃত উন্নত চেতন-স্তরের কিছু মানুষ— সেই সময়কার পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং তখনকার মানুষের বোধশক্তি— চেতনা, জ্ঞান-বুদ্ধি সাপেক্ষে— তখনকার মানুষের প্রয়োজন বোধ করে, তাদেরকে সমাজবদ্ধ এবং উন্নত করে তুলতে, সৎ ও সুস্থ করে তোলার উদ্দেশে, বিভিন্ন জন — বিভিন্ন স্থানে ( তাঁদের জ্ঞান-অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে) তখনকার কালোপযোগী বিভিন্ন ধর্মের জন্ম দিয়ে ছিলেন। যা তখনকার সময়ের প্রেক্ষাপটে হয়তো সঠিক ছিলো। পরবর্তীকালে, সেই ধর্ম— কিছু স্বার্থান্বেষী কুচক্রীদের কবলে পড়ে—  সে নিজেই হয়েছে ধর্মচ্যুত।

তারপর কেটে গেছে বহু সময়। বিজ্ঞানের পথ ধরে বহু পরিবর্তন ঘটে গেছে আমাদের জীবনে। ক্রমশই গতি বেড়েছে। গরুরগাড়ি থেকে মোটরগাড়ি, তারপর একে একে গতি বাড়তে বাড়তে ইন্টারনেটের যুগে রকেটের গতি এসে গেছে আজ মানব জীবনে। আমাদের একটা বড় অংশের চেতনাও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক, বিশেষতঃ নতুন প্রজন্মের। কিন্তু আমাদেরকে গাইড করার মতো— দ্রুত মনোবিকাশ— আত্ম-বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করার মতো সময়োপযোগী কোনো ধর্ম নেই আমাদের সামনে।

প্রচলিত ধর্ম পড়ে আছে প্রায় সেই আদিম অবস্থাতেই। আমরা পড়ে আছি সেই তিমিরেই। ওপরে ওপরে কিছুটা আধুনিকতার রঙ লাগলেও, অন্ধ-বিশ্বাসের কালো পট্টি এখনো আমাদের চোখ ঢেকে রেখেছে। আমরা এখনও ঘুরে মরছি— অজ্ঞান-অন্ধের মতো, এক তীব্র মোহের ঘোরে। এই অজ্ঞানতার ঘোর থেকে— এই অন্ধত্ব থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইলে— মুক্তি পেতে চাইলে, চোখ মেলে সত্যকে উপলব্ধি করতে চাইলে, জীবনে প্রকৃত সুখ-শান্তি-আনন্দ ও সুস্থতা লাভ করতে চাইলে, আমাদের মৌলিক ধর্ম— মানবধর্মকে বরণ করে নিতে হবে, তাকে গ্রহন করতে হবে সর্বাত্মকরণে।

আজকের দিনে চাই— আজকের মানুষের উপযোগী ধর্ম— যুগোপযোগী ধর্ম— মানবধর্ম। সেই চিরন্তন ধর্ম— যা এতকাল আমরা বিস্মৃত হয়ে ছিলাম।

হাজার হাজার বছর ধরে অজ্ঞান—অসহায় মানুষ অন্ধ-বিশ্বাস ভিত্তিক ধর্মের অধিনস্ত হয়ে আসছে। এই সুদীর্ঘকালের ধর্ম-শিক্ষায় মানুষের ওপরটাতে মেকী সভ্যতার চাকচিক্য— ধর্মীয় ভেক বা ভন্ডামোর ছাপ পড়েছে শুধুমাত্র, অন্তরের অন্ধকার ঘোঁচেনি এতটুকুও। অধিকাংশ মানুষ যে তিমির সেই তিমিরেই রয়ে গেছে আজও। স্বার্থান্বেষীদের দ্বারা কুক্ষিগত প্রচলিত ধর্ম মানুষের সচেতন মনের বিকাশ ঘটাতে চায়নি কোনদিনই।

প্রচলিত ধর্ম ও রাজতন্ত্র (বর্তমানে রাজনীতি) উভয় উভয়ের স্বার্থে —একে অপরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট। মেকী মানবসভ্যতার অন্যতম ভিত্তি স্বরূপ শক্তিশালী তিনটি স্তম্ভ হলো— ধর্ম, রাজতন্ত্র আর বৈশ্যতন্ত্র। এরা পারতপক্ষে (কম-বেশি) প্রত্যেকেই মানুষকে অজ্ঞান-অন্ধ ক’রে রাখতে, তাদের খুশিমতো মানুষকে ব্যবহার করতে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে বদ্ধপরিকর। মানব মনের যথেষ্ট বিকাশ —এদের কাম্য নয়।

এককালে, আদিম মানুষকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে, তাদেরকে সমাজবদ্ধ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ ক’রে তুলতে, প্রচলিত ধর্মের প্রয়োজন ছিল হয়তো। কিন্তু সময়ের সাথেসাথে তা’ সময়োপযোগী না হয়ে ওঠায়, বরং দুষিত ও বিকৃত হয়ে ওঠায়, এখন তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে অনেকাংশে। অন্ধ-বিশ্বাস ভিত্তিক প্রচলিত ধর্ম মানুষকে কখনোই প্রকৃত জ্ঞানের পথে— সত্যের অভিমুখে অগ্রসর হতে সাহায্য করেনা।

কিছু স্বার্থান্ধ-কুচক্রী মানুষ— তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে, অন্যান্য সাধারণ মানুষকে মানবধর্ম— আত্ম-বিকাশের স্বভাবধর্ম থেকে বিচ্যুত ক'রে— ভুল পথে চালিত করার ফলেই আজ মানুষের এই দুরাবস্থা। সুদীর্ঘ পথ পেরিয়ে এসেও মানুষের যথেষ্ট চেতনার বিকাশ ঘটেনি এই কারণেই।

অধিকাংশ প্রচলিত ধর্ম— সুদীর্ঘকাল ধরে মানুষকে ভুল পথে চালিত করে আসছে। মানুষ তার প্রকৃত ধর্ম— মানবধর্ম ভুলে গিয়ে— বংশানুক্রমে এই ধর্মেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাকে তার মূল ধর্ম— আত্ম- বিকাশমূলক ধর্মে ফিরিয়ে আনতে, তাকে সচেতন করে তুলতে, মানবধর্ম— মহাধর্মকে আজ আমাদের বিশেষ প্রয়োজন।

আজ চারিদিকে যে ভীষন অসুস্থতা— অরাজকতা, বিকার-বিকৃতি, যে তমসাচ্ছন্ন ঘোর সঙ্কট পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা’ অনেকাংশেই এই সব ধর্মের গর্ভে সৃষ্ট। ধর্ম নিজেই যদি অজ্ঞান-অন্ধ —দুষিত —অসুস্থ, বিকারগ্রস্ত হয়, তার অধীনস্ত মানুষ ভাল হয় কী করে! দু-একজন ব্যতিক্রমী মানুষকে নিয়ে আহ্লাদিত হলে হবেনা!

সারাবিশ্বে যত গন্ডগোল— যত সমস্যা— সঙ্কট, তার অধিকাংশের জন্যই দায়ী হলো— বিশ্বাস বা অন্ধ-বিশ্বাস। যে ব্যক্তি বা বিষয় সম্পর্কে আমার সম্যক জ্ঞান নেই, স্পষ্ট ধারণা নেই, সেই ব্যক্তি বা বিষয় সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা বা কল্পনাকে ‘সত্য’ বলে— নিশ্চিতভাবে মনে স্থান দেওয়াই হলো— বিশ্বাস বা অন্ধ-বিশ্বাস। এ' যে কত বিপদজনক —কী মারাত্মক, তা’ একটু সজাগ দৃষ্টিতে চারিদিকে তাকালেই বোঝা যাবে। বোঝা না গেলে, —সে-ও হবে ঐ অন্ধ-বিশ্বাসের কারণেই। জ্ঞানী মানুষ মাত্রই তাদের ধারণা—বিশ্বাস ও জ্ঞানকে আপাতসত্য বলে মনে ক’রে থাকেন। আর, একজন অন্ধ-বিশ্বাসী তার বিশ্বাসকেই পরম সত্য বলে মনে করে।

পুরস্কারের লোভ আর শাস্তির ভয় দেখিয়ে পশুকে এবং পশুতুল্য নিম্নচেতন-স্তরের মানুষকে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। একটু জ্ঞান-চক্ষু ফুটলে— সচেতন মনের একটু বিকাশ ঘটলেই— সে মানুষ তখন আর ওসব বুজরুকির দ্বারা কারো নিয়ন্ত্রণে থাকেনা। তাই, অধিকাংশ প্রচলিত ধর্ম ও ধর্ম-ব্যবসায়ীগণ চায়না মানুষের চেতনার বিকাশ ঘটুক। স্বর্গলাভ— পূণ্যলাভ প্রভৃতি পুরস্কারের লোভ আর নরকাদি শাস্তির ভয় দেখিয়ে, অলৌকীক কাহিনী আর আজগুবি দার্শনিক তত্ত্বে ভুলিয়ে— মানুষকে অজ্ঞান-অচেতন করে রাখতেই সে বেশি আগ্রহী।

সারা পৃথিবীজুড়ে— মানবজগতে যে কঠিন সমস্যা চলছে, যে ঘোর সংকট বর্তমান, ধর্ম-রাজনীতি —শাসন ব্যবস্থার পক্ষে তার সমাধান সম্ভব নয়। তা' যদি সম্ভব হতো, —তাহলে এই নিদারুণ পরিস্থিতির সৃষ্টিই হতো না আজ। একমাত্র, যুক্তিসম্মত অধ্যাত্ম বিজ্ঞানের পথে— প্রকৃত আত্ম-বিকাশ কার্যক্রমের মধ্য দিয়েই এর সমাধান সম্ভব। অনেকেই মানবধর্মের মূল বিষয়টি ভালভাবে না বুঝে— নিজের নিজের ধর্মকেই মানবধর্ম বলে থাকেন। শুধু মানবধর্ম —্মানবধর্ম বলে, সোর মচালেই হবেনা, মানবধর্ম কী তা' জানতে হবে, —তাকে অনুসরণ করতে হবে।

আজকের এই করুণ পরিস্থিতিতে মানবজাতিকে রক্ষা করতে, চাই— প্রকৃত ‘মানবধর্ম’-এর অনুশীলন। যে ধর্ম মানুষকে মিথ্যার পিছনে না ছুটিয়ে— ছোটাবে ‘পূর্ণ বিকশিত মানুষ’ হয়ে ওঠার লক্ষ্যে। হ্যাঁ, ইতিমধ্যে সে-ও একটু একটু করে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করেছে! এখন, তাকে অভ্যর্থনা জানাতে হবে আমাদের নিজেরদের স্বার্থেই।

যুগ যুগ ধরে বহু মনীষীই আমাদের বলেছেন— ‘মানুষ হও’... ‘মানুষের মতো মানুষ হও’... ‘প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠো’... কিন্তু, কি উপায়ে যে যথেষ্ট বিকশিত মানুষ হয়ে ওঠা যাবে, —তার হদিশ নেই কোথাও।

যে সব পথ অনেকে দেখিয়ে গেছেন, সে সব পথে যথেষ্ট বিকশিত মানুষ হয়ে ওঠা যাবেনা কোনও দিনই। তা’ যদি হতো— তাহলে দেশের তথা পৃথিবীর চেহারাটাই পালটে যেতো।

এখানে উল্লেখ্য, মানুষ হওয়া মানে শুধু মানব দরদী হওয়াই নয়, মানুষ হওয়ার অর্থ হলো— মানব-মনের যথেষ্ট বিকাশ সাধন।

আজ, মানুষ গড়ার প্রকৃত দিশা দেখিয়েছেন আমাদের সদগুরু— মহর্ষি মহামানস তাঁর আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রমের মধ্য দিয়ে। এ’-ই হলো প্রকৃত আত্ম-বিকাশ লাভের পথ। মানবধর্মই মহাধর্ম।

​​

বিশ্ব-শান্তি প্রতিষ্ঠায় মানবধর্ম— মহাধর্ম-ই একমাত্র উপায়। বিশ্বজুড়ে মানব ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হলে, তবেই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

 

এই লেখাটি মহর্ষি মহামানস-এর একটি বক্তৃতার সারসংক্ষেপ। 

উপক্রমণিকা

একজন মানুষ রূপে, আমরা প্রত‍্যেকেই একটি সহজ ধর্ম নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে থাকি, তা' হলো~ মানবধর্ম। কিন্তু সমাজ-সংসার সেই মানবত্বলাভ মুখী স্ব-বিকাশমূলক স্বাভাবিক ধর্ম থেকে আমাদেরকে বিচ্যুত করে--- বিপথগামী ক'রে, কোনো একটি বিশ্বাস ভিত্তিক ধর্ম নামক অধর্ম আমাদের উপর আরোপ ক'রে বা চাপিয়ে দেওয়ার ফলে, আমরা স্বতঃস্ফূর্ত মনোবিকাশের পথ থেকে সরে এসে অন্ধের মতো গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে চলেছি।


এইভাবে হাজার হাজার বছর ধরে চলতে চলতে আজ আমরা মানবজীবনের মূল লক্ষ্য~ পূর্ণ বিকশিত মানুষ হয়ে ওঠার লক্ষ্য থেকে বহুদূরে সরে এসেছি। এতদিনে স্বাভাবিকভাবে যতটা মনোবিকাশ তথা মানববিকাশ হওয়ার ছিল, তার কিয়দংশ বিকাশও হয়ে ওঠেনি আজ।

 

ক্রমশ আত্মবিকাশ লাভের মধ্য দিয়ে মানবত্ব লাভের উদ্দেশ্যে --- বিস্মৃতপ্রায় মানবধর্মকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে, মানুষকে তার মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে, সময়ের চাহিদা মতো আত্মপ্রকাশ করেছে~ 'মহাধর্ম'। বিমূর্ত মানবধর্মের মূর্ত রপই হলো~ মহাধর্ম।

 

একে সঠিকভাবে বুঝতে হলে, পূর্বলব্ধ সংস্কার --বিশ্বাস থেকে মুক্ত হয়ে, প্রচলিত ধর্ম-- শাস্ত্র-- মত এবং বিভিন্ন ব্যক্তির উক্তির সঙ্গে তুলনা না করে, নিরপেক্ষ যুক্তি-বিচারসহ মুক্তমন নিয়ে সত্য উপলব্ধির উদ্দেশ্যে এগিয়ে যেতে হবে। এ'হলো বিশুদ্ধ জ্ঞানের পথ।

 

এখানে একটা কথা উল্লেখনীয়, সহজ-প্রবৃত্তি এবং সহজ-ধর্মের সঙ্গে কিছু নীচ প্রবৃত্তি, কিছু আদিম বা পাশবিক বা প্রাক-মানব ধর্মও আমরা জন্মসূত্রে লাভ করে থাকি। এখন, সেগুলিকে অনিষ্টকর অবদমন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবদমিত করে নয়, সঠিক শিক্ষা ও চিকিৎসার মাধ্যমে, এবং জ্ঞান ও চেতনার আলোকে— সেইসব অন্ধকার অংশগুলিকে আলোকিত করে তুলতে হবে।   

 

যা সম্ভব হয়ে ওঠে, মানবধর্মের পথ ধরে অনেকটা এগিয়ে থাকা সত্যদ্রষ্টা মানুষের লব্ধ জ্ঞান-অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ও উপদেশ লাভের মাধ্যমে। তাঁদের উদ্ভাবিত কিছু বিশেষ উপায় বা পদ্ধতি অনুশীলনের মাধ্যমে। এ-ও মানবধর্ম তথা মহাধর্ম-এরই একটি অংশ। বিশ্বাস ভিত্তিক এবং প্রতারণামূলক ধর্ম পথে এটা কখনোই সম্ভব নয়।

 

       ( মহর্ষি মহামানসের 'মানবধর্ম আসলে কী' বক্তৃতার প্রথম অংশ নিয়ে এই ভূমিকাটি প্রস্তুত হয়েছে। )

শ্বামী ভূমানন্দ 

মানুষকে শিক্ষা দেওয়া~ জ্ঞান দেওয়া আমার মূল উদ্দেশ্য নয়। আমার জ্ঞান-অভিজ্ঞতা-ধারণা শেয়ার ক'রে, মানুষকে সজাগ-সচেতন ক'রে তোলা, এবং মানবজীবনের মৌলিক বিষয়গুলি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করে তোলাই আমার মূল উদ্দেশ্য। ~মহর্ষি মহামানস
Get In Touch

Thanks for submitting!

My Books

উপসংহার

মহর্ষি মহামানসের এই মতবাদের মূল বিষয়ের সঙ্গে আপনি একমত না হলে, বুঝতে হবে— এই বিষয়টি আপনার জন্য নয়। সেক্ষেত্রে, আপনি আপনার পথে চলবেন, বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই।

 

তবে যদি কোনো ব্যক্তি যুক্তি-বিচারের মাধ্যমে মহর্ষির কোনো মত খণ্ডন করতে ইচ্ছুক হন, প্রচলিত কোনো ধর্ম—শাস্ত্র—মত বা কারো উক্তির সঙ্গে তুলনা না করে, বাইরের কনো প্রসঙ্গ উল্লেখ না করে, নিজস্ব যুক্তি-বিচার প্রয়োগের দ্বারা তা’ করতে পারবেন। এছাড়া, কোনকিছু জিজ্ঞাস্য থাকলেও জানাতে পারবেন। আপনার এই মতামত লিখিতভাবে জানাতে হবে। আমাদের ওয়েবসাইটেও (কমেন্ট বক্সে) জানাতে পারবেন। মৌখিকভাবে আলোচনা করা সম্ভব নয়।   

'মহাবাদ' ও 'মহাধর্ম' কখনো শেষ কথা বলেনা। বলেনা, আমি যা বলছি তাই একমাত্র সত্য! এই জাগতিক ব‍্যবস্থায় আমরা পূর্ণ চেতনার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি। আমরা এখন মানব-চেতন-স্তরে অবস্থান করছি। লক্ষ্যে পৌঁছাতে, আমাদের সামনে এখনো অনেক পথ বাকি। এই চেতনা বিকাশের পথের মাঝামাঝি কোনো একজায়গায় দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ পথের জ্ঞান— অসম্ভব।

'মহাধর্ম' মত কখনোই অন্ধবিশ্বাসীদের মতো 'পূর্ণ সত্য জানি' বলে, দাবী করেনা। সে বলে, আপাত সত‍্যের সিঁড়ি বেয়ে পূর্ণ সত‍্যের লক্ষ্যে এগিয়ে চলাই আমাদের ধর্ম। আর তাই, তাকে মাঝে মাঝেই আপডেটেড ও সময়োপযোগী হতে দেখা যায়। 'মহাধর্ম' হলো অগ্রগামী মানুষের স্বধর্ম~ সচল ধর্ম।

এই গ্রন্থের মর্মোদ্ধার করতে হলে, ঐকান্তিকভাবে আগ্রহের সঙ্গে— মুক্তমন নিয়ে এর অন্তরের গভীরে প্রবেশ করতে হবে। গভীর মনোযোগ সহকারে সমগ্র গ্রন্থটি অধ্যয়ন করতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে পাঠ করলে— ভুল বোঝার সম্ভাবনা থাকবে। তাছাড়া, হিংসা-বিদ্বেষ-বিরুদ্ধভাবসহ অন্ধ-বিশ্বাস নিয়ে অগ্রসর হলে, কিছুই লাভ হবেনা। বরং নিজের মনোবিষে নিজেই আক্রান্ত হবে। একমাত্র বিজ্ঞান-সচেতন এবং অধ্যাত্ম-সচেতন মুক্তমনের আত্ম-বিকাশকামী মানুষই এই গ্রন্থের মর্মোদ্ঘাটন করে আনন্দিত হতে সক্ষম।  

 

এই গ্রন্থের দর্শন ভাগ— সৃষ্টিতত্ত্ব, জীব-সৃষ্টিতত্ত্ব প্রভৃতি সম্পর্কে সহমত হওয়া সবার পক্ষে সম্ভব নয়। শুধু খোলা মনে যুক্তি-বিচার প্রয়োগের মধ্য দিয়ে বিষয়গুলিকে সম্ভাবনাতত্ত্ব রূপে উপভোগ করতে পারলেই তা’ যথেষ্ট হবে। দর্শন হলো— থিওরী, সম্ভাবনাতত্ত্ব, থিসিস বা হাইপোথিসিস, তাত্ত্বিক বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানের দর্শন বিশেষ  (‘বিশ্বাস ও দর্শন’ প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য)। দর্শনকে সত্য বলে বিশ্বাস করা আমাদের নীতি বিরুদ্ধ।

সবশেষে বলি, মহর্ষি মহামানস-এর একনিষ্ঠ ভক্ত ও শিষ্যদের নিয়ে মনোবিকাশ তথা মানববিকাশমূলক একটি সংগঠন বা সোসাইটি গড়ে উঠতে চলেছে। আপনি এই মহান কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হতে ইচ্ছুক হলে, যোগাযোগ করুন। —সম্পাদক 

Press
Events
Next Event
When
02 Jun 2023, 7:00 pm
Where
The Book Shop,
500 Terry A Francois Blvd, San Francisco, CA 94158, USA
Contact

আপনি যদি মানবধর্ম- মহাধর্মের স্পন্সর / পৃষ্ঠপোষক, সদস্য / অনুসারী, সংগঠক, আধ্যাত্মিক নেতা হতে আগ্রহী হন, দয়া করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। 
WhatsApp: 9733999674

bottom of page